এক/
বাস থেকে নামতে যাবে ত্রাতুল উঠে দাড়িয়েছে।
আজ ভীড় নেই। রোদ আছে সমগ্র শহর ভর্তি। হাওয়া নেই থমকে আছে।
হাতল পেড়িয়ে পা-দানি ছেড়ে পা রাখলো রাস্তায়। খই ফুটবে উত্তাপে। বাস থেকে পেছনে যে ক’জন নেমেছে তাদের মাঝে কারো হিলের শব্দ কানে কড়াৎ করে কানে ঢুকছে।
শব্দ করে যদি কেউ এভাবে চলে রাস্তায় তাহলে বিরক্তির ডানা মেলে ত্রাতুলের গায়। কিন্তু কি আর করা যাবে!!
শব্দটা চলতে চলতে ওর পায়ের পিছু দাড়িয়ে গেল হঠাৎ। তারপর বললো।
-এই যে শুনুন ?
ত্রাতুলের পেছনে ফেরা চোখ,
-কিছু বলছেন ?
শব্দটা এগিয়ে এসে বলে আপনার ছাতাটা একটু দেবেন ? রোদ চোখে ঝাপসা দেখছি। হাটতেই পারছি না। ত্রাতুল কি করবে ? বুঝতে পারছে হয়তো এটাই সত্যি। তাই কোন ভনিতা নয়। নিঃশব্দেই ছাতাটা দিয়ে দেয়।
ভাবের উপর ছক্কা মেরে লাভ নেই। ত্রাতুলের চোখ জ্বলছে এখন। রোদ তারও সহ্য হয়না।
পাশাপাশি দু’জন হাটছে। ষ্টেশনটা খুব দুরে নয়,দশ মিনিটের হাটা পথ। তবে আজ ঘেমে ভিজে যাবে ত্রাতুল সেটা বুঝতে পারছে। পাশে হাটছে মেয়েটা কিছু বলছে না কিন্তু উসখুস করছে। কথার খই ভাজবে না,তো আবার।
দুই/
-আমি তনিমা, আপনি?
-ত্রাতুল
-কি করা হয় ?
-পড়ালেখা আর মাঝে মাঝে সময় পোড়াতে ঘোড়ার ঘাস কাটি।
- ওহ্ নাইস !! ভবঘুড়েরা তো কবি টাইপের হয়।
-কে বলেছে আপনাকে ?
-আপনাকে দেখলেই বোঝা যায় !!
-আপনি বুঝি নিউমারলজি পড়ছেন।
- না,তো; এ-কথা বললেন কেন ?
- আপনি আমার মুখ দেখেই বলে ফেললেন তো।
-সত্যিই আপনি কবি !!
-কবি না,তবে মাঝে মাঝে খাতার পাতা লেখে ভরে ফেলি।
ত্রাতুল চোখ মেলে ভালো করে দেখে নেয় তনিমাকে। নীল পাড়ের সাদা শাড়ি। চোখে রোদ ঠোকনোর মতো সোনালী ফ্রেমের চশমা। দেখে মনে হয় খুব শক্ত টাইপের। কিন্তু কথায় তো মনে হচ্ছে আন্তরিক।
ত্রাতুল চুপ হয়ে গিয়েছে। হাটছে।
তনিমা আবার বলে উঠে থাকেন কোথায় ? ত্রাতুল বলে বনলতা ষ্ট্রিট আর,আপনি ? তনিমা হেসে বলে জীবনানন্দ এভিনিউ।
-মজা করছেন ?
- না সত্যি; বলে আবার হাসে তনিমা।
তিন/
ট্রেন এসে গেছে।
উঠে বসেছে ত্রাতুল। মাত্র ত্রিশ মিনিটের পথ। উল্টো দিকের সিটে তনিমা বন্ধ ছাতা দুলিয়ে বাতাস করছে। ত্রাতুল বাইরে চোখ মেলতেই দেখে বন্ধু দিবসের কনসার্ট হচ্ছে স্কাউট মাঠে। বন্ধু শব্দটা মনে হতেই মনের স্ক্রিনে ভেসে উঠে; সেই মেঠোপথ,আমগাছ,জোছনার উঠোন আর ছোট্ট ব্রিজের ধারে মাছ ধরা এক ঝাক বন্ধু ছিলো।
ছোট্ট বেলার একটা ফটোগ্রাফও আছে। সাদাকালো । জড়াজড়ি করে দাড়িয়ে থাকা পাঁচটি ছেলেমেয়ে। ত্রাতুলের একটা মেয়ে বন্ধুও ছিলো। না জানি সে, এখন দেখতে কেমন হয়েছে। দেখা হয়নি কতোদিন। নিমা ছিলো ইঞ্জিনিয়ারের মেয়ে। সেই ছোট বেলার বন্ধু।
-এই যে ত্রাতুল, ডাকছে তনিমা। মনের স্ক্রিনের লাইট অফ হয়ে যায় ত্রাতুলের। তনিমা বলে কি ভাবছেন এতো ? ওর মনে কথাগুলো ঘুরপাক খায় হেসে বলে কিছু না এমনি। সেই ছোটবেলার নিমা আর আজকের এই তনিমা এক নয় তো !!
ত্রাতুল আচমকা বলে বসে আচ্ছা আপনার বাবা কি করেন ?
-ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন;এখন অবসরে আছেন।
-আপনারা কি আগে গুরুদাশ পুরে ছিলেন ?
-তনিমা হেসে বলে নাহ্ তো; কিন্তু কেন বলুন তো ?
- না মানে আমার ছোটবেলা ওখানে কেটেছে তো।
ত্রাতুলের কথা শুনে তনিমা হাসে। ট্রেন চলছে আপন মনে পথ পাড়ি দিয়ে।
চার/
ট্রেন এসে থেমে যায়।
ত্রাতুল নেমে গিয়ে সোজা হাটা ধরে। আবার পেছন পেছন সেই শব্দ। আবার সেই কন্ঠ।
এই,যে ত্রাতুল আপনার ছাতা নিবেন না ? ত্রাতুল ভুলেই গিয়েছিলো আরে তাই তো !! ছাতা নেয়।
তনিমা রিকসা ডেকে তাতে চেপে বসে। কিছুদুর গিয়ে রিকসা থেকে নেমে আসে আবার ডাক দেয় ত্রাতুল কে। ত্রাতুল গায়ে রোদ মেখে এগিয়ে যায়।
হেপি ফ্রেন্ডশীপ ডে বলে একটা ঘাসফুল ধরিয়ে দেয় ত্রাতুলের হাতে। ওর চোখ চিকচিক করে উঠে,হাসি চলে আসে মুখে।
ওহ্ ধন্যবাদ। আজকাল ভুলেই যাই সব।
তনিমা সেই বিকেলে রিকসা নিয়ে পথ ছাড়ে। ত্রাতুল রোদ গায়ে মেখে বনলতা ষ্ট্রিটে ফেরে।
এক বছর পর........................
ট্রেন থেকে নেমে চশমাটা মুছ্ছে ত্রাতুল।
পেছন থেকে একটা শব্দ এসে দাড়ালো। এই,যে মিষ্টার; হেপি ফ্রেন্ডশীপ ডে !!
ত্রাতুল অবাক চেনা নেই, জানা নেই কে, এই মেয়ে। ও বিড়বিড় করে বলে উঠে আমি কি আপনাকে চিনি ? আপনি মনে হয় ভুল করছেন ?
নিন ঘাসফুলটা ধরুন ? মেয়েটা এগিয়ে দেয়।
ত্রাতুল নেয়, তবে সেটা বিস্ময় চোখে। মেয়েটা বলে আমাকে চিনতে পারছেন না !! আমি তনিমা। গত বছর ফ্রেন্ডশীপ ডে,তে এই খানে আপনাকে ঘাসফুল দিয়েছিলাম।
পকেট হাতরে ত্রাতুল একটা চকলেট বের করে; তনিমার হতে দিয়ে বলে হেপি ফ্রেন্ডশীপ ডে !!
তনিমা শাড়ীর আচঁলটা টেনে বলে আমি সত্যিই অবাক হলাম ত্রাতুল আপনি আমায় চকলেট দিলেন এর রহস্যটা বলবেন কি ?।
ত্রাতুল আকাশটা চোখে একেঁ বলে আমি যখন স্কুলে পড়তাম আমার একটা বন্ধূ ছিলো। তার নাম ছিলো নিমা। ঠিক আপনার মতো ঘাসফুল দিতো যে কোন উৎসব মুখর দিনগুলোতে; আর আমি তাকে চকলেট দিতাম। তাকে দেখিনা অনেকদিন হলো; কেন যেন আমার মনে হলো সেই মেয়েটির ছায়া আপনার মাঝে ঘুড়ছে।
আজ আবারও রিকসায় উঠে বসেছে তনিমা।
রিকসা চলতে যাবে এমন সময় তনিমা আবার বললো ত্রাতুল একটা সত্যি কথা বলবো?
ত্রাতুল বলে উঠলো ইচ্ছের আকাশে আপনার সত্যিটা উড়িয়ে দিন; চোখ মেলে দেখি !! তনিমা হেসে বলে আসলে আমিই আপনার স্কুলের সেই নিমা।
_____________________________________________
আমার দেবার মতো নেই কিছূই তাই এই সামান্যতা ...................
গল্পটা বন্ধূ দিবসের শুভেচ্ছায় উপহার দিলাম গল্পের নায়ক ত্রাতুল কে
ব্লগার ত্রাতুল
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:৪৬